Thursday, December 18, 2014

নিশি

ঘুম টা ভেঙ্গে গেল। আচমকা। জমাট নিরেট রাত। সুইচবোর্ডের লাল আলোটা চেয়ে আছে। সিঁড়ির ঘড়িটা টিক টিক টিক টিক করে চলেছে, চলেছেই। ভয় করছে। চোখ বন্ধ করলেই গলার কাছটায় ডেলা পাকাচ্ছে ভয়। অনেকদিন আগে এরমই এক ভয়ের রাতে বাথরুমে গিয়ে বাঁ হাতের শিরায় ফাঁকা সিরিঞ্জের ছুঁচ বিঁধিয়ে দিয়েছিল সে। বুড়ো আঙুলটা ডান্ডার মাথার চাকতিটায় চেপে ধরে আস্তে আস্তে ঠেলতে শুরু করেছিল। নীল শিরাটা হাওয়ার চাপে একটু ফুলে উঠতেই অবশ্য আঙ্গুল সরিয়ে নিয়েছিল। বার করে নিয়েছিল ছুঁচ। শিরাটা কিছুদিন ফুলে ছিল। তারপর আবার আগের মতন। কেউ খেয়াল করেনি। বাথরুমে যাবে না সে। ক্যাবিনেটের আয়নায় নিজের ফোলা মুখটা রাতে দেখলে আরো ভয় হয়।

বিছানায় উঠে বসে একটা সিগারেট ধরালো। অন্ধকার ঘরে নিঃশ্বাস নিতে থাকা আগুনের মন্ডটার দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে ভয়টা একটু কমলো। আলো ফুটলে, চান করে, খেতে বসে তিন আঙুলে গরম ভাত ডাল দিয়ে মাখতে মাখতে ভয়টা কমে আসে। ট্রেনের ঠাসাঠাসি ভিড়ে, হকারের চিৎকারে, যাত্রিদের ঘামের গন্ধে আশ্বস্ত লাগে। অটোওয়ালা খুচরো চেয়ে দাঁত মুখ খিঁচোলে আরাম হয় বেশ।

অফিসের এক্সেল শীটগুলো ঠান্ডা ঘরে তার দিকে তাকিয়ে থাকলে আবার বিন্দু বিন্দু ভয় বুকে দানা বাঁধে। সন্ধ্যেয় বেরিয়ে পানশালায় হাজিরা দিতে হয়। দু'হাতে বিয়ারের ঠান্ডা গ্লাসটা ধরে বেশ ভালো লাগে। উষ্ণ লাগে। সোনালি তরলে বুদবুদের মরে যাওয়া দেখে শান্তি হয়। 

সিগারেটটা শেষ। আবার হাতটা খালি হয়ে যায়। বালিশের নিচে থেকে মোবাইল ফোনটা বের করে। দু'হাতে চেপে ধরে চিত হয়ে জোড়া হাত বুকের ওপরে রেখে শুয়ে পড়ে। চোখ বুজে। হাতদুটো ঘেমে উঠছে। ঘুম আসবে। ঘুম আসছে।

No comments:

Post a Comment