ক্রিস্টমাসের ছুটি পড়ে গেছে। চিড়িয়াখানা, ভিক্টোরিয়া,প্ল্যানেটোরিয়াম, কলবল করছে বাবা মার হাত ধরে বেড়াতে আসা কচিকাঁচাদের কলরবে। চিড়িয়াখানায় জন্তুর খাঁচার সামনে দাঁড়িয়ে ছবির সঙ্গে মনে মনে মিলিয়ে নিচ্ছে বাঘ, ভাল্লুক,হাতি। আর নানান প্রশ্নে জর্জরিত করে ফেলছে বাবা মা কে।
“হাতির সামনে যেটা ঝুলছে ওটা ল্যাজ নয় কেন?”
“জিরাফের গলা অত লম্বা হল কিকরে?”
“বাঘটা কি শুধু মাংস খায়? আর বিরিয়ানি খায় না?”
চিড়িয়াখানায় সেদিন এক অদ্ভুত মন ভালো করা আবহাওয়া।
তারই মাঝে হঠাৎ হৈ চৈ। গণ্ডারের খাঁচার দিক থেকে একটা অদ্ভুত আওয়াজ আসছে। কিসের শব্দ ঠিক বোঝা যাচ্ছে না। কেউ কেউ গোলমালের আশঙ্কায় তাড়াতাড়ি টিফিন বাক্স টাক্স বন্ধ করে ব্যাগে ঢোকায়, ঝামেলা এড়াবে বলে। আর একদল একে একে জমা হতে থাকে গণ্ডারের খাঁচার সামনে। ব্যপারটা ঠিক কি হয়েছে বোঝা যাচ্ছে না। চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ দ্রুত লোক পাঠায় গণ্ডারের খাঁচায়, কি ব্যপার সরেজমিনে জানতে। এদিকে শব্দটা ক্রমেই বেড়ে চলেছে। এবং আস্তে আস্তে বোধগম্যও হয়ে উঠছে। শব্দটা কান্নার। ফুঁপিয়ে কান্না নয়। বেশ গলা ফাটিয়ে হাউ হাউ করে কান্নার শব্দ আসছে গণ্ডারের খাঁচার দিক থেকে। সবাই অবাক। কেউ কিচ্ছু বুঝতে পারছে না।
তখন গণ্ডারের কেয়ারটেকার গেলো বুঝিয়ে সুঝিয়ে তাকে ঠাণ্ডা করতে। কিন্তু কাকে বোঝাবে। সে বুঝলে তো? তার তো কথা নেই বার্তা নেই শুধু হাউ হাউ করে কান্না। বলি ব্যপারখানা কি?খিদে পেয়েছে? কোনো বাচ্চা ঢিল ছুঁড়ে মেরেছে? শিং ব্যথা করছে? নাহ। কিছুতেই কিছু হয় না। গণ্ডারের কান্না আর থামেই না। কান্নার কারণও বোঝা যায় না।
অনেকক্ষণ পর সে একটূ সামলাতে সে কেয়ারটেকারকে সব খুলে বলল।
গণ্ডার বাবাজির ডিপ্রেশনের কারণ ‘insecurity complex’।হঠাৎ তার মনে কে যেন ভয় ঢুকিয়ে দিয়েছে, যাদবপুর ইউনিভার্সিটির ভিসির চামড়া নাকি তার চামড়ার থেকেও মোটা। সেই ভয়েই গণ্ডারের এবারের ক্রিস্টমাসটা মাটি হল।