Wednesday, April 1, 2015

দীপিকা, ক্লিভেজ এবং তাঁর choice

দীপিকা পাডুকোনকে আমার দারুণ লাগে। কী মিষ্টি দেখতে। কী লম্বা। কী সুন্দর গালে টোল পড়া হাসি। অভিনয়ও নেহাৎ মন্দ নয়। তবে এ কথাও সত্যি, ওঁর অভিনয়ের চেয়ে রূপের আমি বেশি ভক্ত। তাই, ফ্যাশন ব্লগে দীপিকার appearance দেখব বলে মুখিয়ে থাকি। সিনেমার প্রোমশনে, পার্টিতে, এয়ারপোর্টে দীপিকা কী পোষাক পরলেন, কিরকম মেক আপ করলেন, কী কী গয়না পরলেন এসব দেখতে, মাপতে, ফলো করতে বেশ লাগে।

কয়েকমাস আগে দীপিকাকে ঘিরে একটা বিতর্ক হয়। বলা ভালো, দীপিকার ক্লিভেজ ঘিরে। কোনও এক আন্তর্জালিক পেজ থ্রি ওয়েবসাইট দীপিকার ক্লিভেজের ছবি দেখিয়ে একটি ছবি প্রকাশ করে যার মূল উদ্দেশ্য ছিল দর্শকের দৃষ্টি তাঁর ক্লিভেজের দিকে আকর্ষণ করার। এবং সেই নিয়ে দীপিকা ভয়ানক অপমানিত বোধ করে সেই মর্মে কিছু বক্তব্য রাখেন। এখানে দুটো কথা বলার আছে -

১। দীপিকার মতন কৃশকায়া মহিলাদের ক্ষেত্রে প্রায়ই দেখা যায়, তাঁদের স্তন এবং নিতম্ব ঠিক ভারতীয় পুরুষের পছন্দমাফিক হয় না। কিন্তু দীপিকা যেহেতু নায়িকা, এবং তাঁর সৌন্দর্য্যের মূল কনসিউমার পুরুষ, তিনি নানাবিধ enhancement pad এর সাহায্যে নিজের দেহ আরও রমণীয় করে তোলার চেষ্টা করেন এবং বলা বাহুল্য, সফলও হন। অর্থাৎ, পুরুষতন্ত্রের সৌন্দর্য্যের ব্যাখ্যা মেনেই সাধ্যমত সাজিয়ে তোলেন নিজেকে।

২। এই বিতর্কটা ঠিক তাঁর ছবি ফাইন্ডিং ফ্যানি রিলিজ করার আগেই হয়।

অন্যান্য নানা ফ্যাশন ব্লগ, পেজ থ্রি সাইটে দীপিকার পা, তাঁর বিভঙ্গ ইত্যাদির উল্লেখ করে বহু ছবি বহুবার দেখা গেছে এবং এখনও যায় যেগুলো নিয়ে তাঁকে বিশেষ মাথা ঘামাতে শুনি না।

এবারে আসা যাক vogue পত্রিকার তৈরি It's my choice ভিডিওটার কথায়। এই ভিডিও তে দীপিকা বলেছেন নারীর অধিকারের কথা। ইচ্ছেমতো যৌন সংসর্গ করার স্বাধীনতার কথা, যখন ইচ্ছে বাড়ি ফেরার স্বাধীনতার কথা, বিবাহবহির্ভুত সম্পর্কে লিপ্ত হবার স্বাধীনতার কথা, ইচ্ছেমতো পোষাক পরার স্বাধীনতার কথা, ইত্যাদি। যেগুলো বলেননি, সেগুলো হলো কর্মক্ষেত্রে মহিলাদের স্বাধীনতার কথা, যেমন ইচ্ছে জীবিকা বেছে নেওয়ার স্বাধীনতার কথা, হাউসওয়াইফ হয়েও স্বাধীন জীবনযাপনের অধিকারের কথা, মেয়ে হয়েও পড়াশোনা করার অধিকারের কথা, ইত্যাদি।

উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, এই ভিডিও রিলিজের সময়ও কাকতালীয় গুণে তাঁর আরেক ছবি 'পিকু' রিলিজের সময়ের সঙ্গে মিলে গেছে।  আরও উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো vogue এমন একটি পত্রিকা যারা মাসের পর মাস তাদের প্রচ্ছদে পুতুলের মতো মডেলদের সাজিয়ে, ফটোশপের সাহায্যে ইচ্ছেমতো সেই মডেলদের রোগা এবং ফর্সা করে তাঁদের 'গ্রহণযোগ্য' করে তুলে বাজারে প্রকাশ করে।

এখন প্রশ্ন হলো, বলিউডের নামী অভিনেত্রী, যিনি প্রতি পদক্ষেপে নিজেকে পুরুষ দর্শকের চাহিদার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিজেকে মানিয়ে গুছিয়ে নিচ্ছেন (by choice), তাঁর মুখের এ হেন নারীবাদী বুলি আমরা ঠিক কতটা সিরিয়াসলি নেব? নাকি অপেক্ষা করব সেই দিনের, যেদিন দীপিকা তাঁর দৈহিক প্রোপর্শনের তোয়াক্কা না করে, মেকআপের তোয়াক্কা না করে ক্যামেরার সামনে দাঁড়াবেন এক রক্তমাংসের নারী হয়ে।