Monday, January 26, 2015

ভোওওওওওওওওওওওরসা!

টুবুলদের ছাদ থেকে একটা সাদা-বেগুনি মুখপোড়া বেড়ে উঠে ছোটকার পাছা টা কেটে দিয়েছে এইমাত্র। ওটাকে লটকাতে হবে। টুবুলের বোন আছে ছাদে। ইজ্জৎ কা সওয়াল। ময়ূরকণ্ঠী টা দিয়েই মাত করতে হবে। ঢিল ঢিল দে হারামজাদা! লাটাই ধরতে পারে না আবার ঘুড়ি ওড়ানোর শখ!

টুবুল, পটকা, বুবাই, চানু সবাই আজ প্রতিপক্ষ। ছাদে এদিক ওদিক করে ছড়িয়ে একতে দোতে মুখপোড়া পেটকাটির লাল কালো সাদা সবুজ শরীর, লাটাই, আঠার গামলা, ব্যান্ড এইড। মারকাটারি প্যাঁচের খেলায় শহীদ হচ্ছে ঘুড়ি, কাটা যাচ্ছে নাক, বেজে উঠছে কাঁসর ঘন্টা বিজয়ী ছাদে।

সুতো ছেড়ে, টেনে, বেড়ে, ক্রমে রণক্ষেত্র হয়ে উঠেছে দুপুরের আকাশ। ভিলেন নারকোল গাছ খেয়ে নিচ্ছে পাঁচতের ভি আই পি গুমর। পটকার মায়ের সাধের প্যানসি আর ডালিয়া ফুলগাছ আজ এই মহারণে উলুখাগড়ার মত প্রাণ দিয়েছে তেতলার আলসে থেকে একতলার উঠোনে পতিত হয়ে।

টুবুলের বোন সানগ্লাস পরে আড়চোখে নজর রেখেছে ডাঁয়ে বাঁয়ের ছাদে। হাবুলের মেজোপিসির ছেলে মাঞ্জায় দু হাত কেটে রিটায়ার্ড হার্ট। বাবলু প্রেমিকার এসএমএস-এর উত্তর দিতে গিয়ে, মুহুর্তের অসাবধানতায় একখানা মোক্ষম মোমবাতি খুইয়ে ডিপ্রেশনে চলে গেছে।

ছোটকার পাঁচ বছরের মেয়ের ট্রেনিং চলছে। ছাদের ওপর দিয়ে ভেসে যাওয়া সুতো দেখলেই সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে শিখে গেছে সে। পারিপিসিকে সুকৌশলে ম্যানেজ করে, বুড়িকে দিইয়ে ঢিলে ঘুড়ি বেঁধে নিজেদের ছাদে ট্রান্সফারও করিয়ে ফেলেছে কিকরে কে জানে। আর টুবুলের মাসতুতো ভাই ছোটকার পাছা, বিশুদার পেটকাটি আর চানুর বগগা কেটে এখন হিরো।

সাদা বেগুনি মুখপোড়াটা টার্গেট করে বাড়ছে একটা কমলা-সবুজ ময়ূরকণ্ঠী। ফ্যাঁত ফ্যাঁত সাঁই সাঁই করে উড়ে চলেছে ময়ূরকণ্ঠী সাদা-বেগুনি মুখপোড়ার দিকে। টানটান সুতো, খানখান করবে যেকোনো একজনের ঘুড়িয়াল ইমেজ। আর ঠিক তখনই প্যাঁচ এবং...

Friday, January 23, 2015

আমি পেরুমল

আপনি একটি গাধা। তাজমহল দেখলে আমার ওলকপির কথা মনে পড়ে। ভ্যান গখের সূর্যমুখিগুলো দেখে আমার মনে কোনো কবিতার বা মুগ্ধতার ভাব জাগে না। রবি ঠাকুরের কবিতা আবার হেব্বি বোরিং লাগে। পুর্ণিমার চাঁদ দেখলে মোটে প্রেম পায় না। উত্তম কুমার অত্যন্ত মেয়েলী লোক। বিরিয়ানি অতি কুচ্ছিৎ খেতে।

হতেই পারে এগুলো আমার মত। হতেই পারে এগুলো আপনার ধর্ম বা অধর্ম বিশ্বাসে আঘাত করে। বা আপনার বিশ্বাসের বর্মে নাহক খানিক ফাটল ধরায়। আপনার সঙ্গে আমার যে সব মতে মিলবে, এমন দাসখত কেই বা কবে সই করেছি? করিনি তো? নাকি আমি আমার মত প্রকাশ করায় আপনার বাড়িতে হাঁড়ি চড়ছে না? বা আপনার ছেলেপুলেদের স্কুলে ঢুকতে দিচ্ছে না? কি বললেন? না? সবকটা প্রশ্নের উত্তরই না?

তাই যদি হবে মশাই, আমার গলা কথায় কথায় কাটতে আসেন কেন? কেন আমি ছবি আঁকলে বোম মারেন? গল্প লিখলে বই পোড়ান? কেন ক্ষমা চেয়ে মুচলেখা লেখান? সরস্বতীদত্ত একখান কলম তো যদ্দূর আমি জানি আপনারও আছে। নাহয় তাতে ধার আমার চাইতে কম, কিন্তু কলম ত কলমই বন্ধু। কলম ধরে আমার বাপ চোদ্দপুরুষের গুষ্টির তুষ্টি করুন। আমার ছেলেবেলার নিজ-বিষ্ঠা ভক্ষণের গল্প লিফলেটে ছাপিয়ে উড়িয়ে দিন শহিদ মিনারের মাথা থেকে। তবে বুঝব আপনি বাপের ব্যাটা। আর তাতেই আখেরে আপনারও লাভ।

শত্রুকে নিয়ে বেশি বুকনিবাজি করলে কী হয় জানেন তো? শত্রু ব্যাটাই ফুটেজ খায়। ঠিক আপনাদের মহাকাব্যের কর্ণ আর ইন্দ্রজিতের মত। পাবলিকের মন তো এমনিতেই খুব নরম। মার খাওয়া লোকের জন্য তাদের প্রাণ সদা আউলায়। মিটিং মিছিল বকতিমের চোটে এঁটেল মাটিতেও ধুলোর ঝড় ওঠে। আর আমার মাথার পেছনে রাতারাতি গজিয়ে ওঠে জ্যোতির্বলয়। অবিকল আপনাদের দ্যাবতাদের মতো।

Monday, January 19, 2015

এক মাঘে শীত

শীতের দুপুর নরম রোদের হলুদ ঝিলিক
শ্যাম্পু গন্ধে বিভোর চুলে কাটছে বিলি
অলস আঙুল ছাড়িয়ে নিচ্ছে লেবুর খোসা,
মাদুর জুড়ে ছড়িয়ে ফেলছে কমলা পোষাক।
রোদ পোহাচ্ছে লাইন দিয়ে আচার বয়াম
পায়ের পাতায় বসছে জেলি পেট্রলিয়াম
নিস্তরঙ্গ পুকুর ধারের গুগলি শামুক,
এসব ছুঁয়েই চটুল ছন্দে সন্ধ্যে নামুক।

শুকনো চামড়া শিরশিরিয়ে মাঘের হাওয়া
উড়িয়ে আনুক আরব্য রাত, উলের কাঁটা মিথ্যে মিথ্যে গল্প বুনুক সঙ্গ পাওয়ার।

Sunday, January 18, 2015

কুইন্স বিউটি পার্লার

ওর নরম আঙুলগুলো আমার গাল, কপাল, চোখের পাতা, গলা, ঘাড়, কানের লতিতে ঘুরে ঘুরে, উঠে নেমে, আরাম বুলিয়ে দিতে থাকে কখনো জোরে কখনো ধীরে...ঠোঁটের চারপাশ ছুঁয়ে, চিবুক হয়ে পৌঁছে যায় ভুরুর দুই পাশে, রগ চেপে ধরে কপালের আবছা বলিরেখা মুছে দেয় অনায়াসে। মিলিয়ে দেয় ক্লান্তির কালচে ছোপ, পরাজয়ের কালিমা, অবসাদের দাগা। আরামের আতিশয্যে আর ওর আঙুলের জাদুতে একটু একটু করে গলে যাই। আমরা কেউ কারুর নাম জানিনা। জানার দরকার পড়েনি কোনওদিন। শুধু রূপচর্চা করার ইচ্ছে হলে ওদের ছোট্ট পার্লারের দরজা ঠেলে ঢুকে পড়ি আর ওর চ্যাপটা নেপালি মুখের হাসি আমাকে ডেকে নিয়ে গিয়ে বসিয়ে দেয় গাবদা চেয়ারে। ড্রয়ার খুলে বের করে ফেলে নানারকম কৌটো, শিশি, তুলো।  কেরানী গৃহিণী চামড়ায় বুলিয়ে দেয় ওর ম্যাজিক ওয়ান্ড। অমুক তমুকের শাশুড়ির অত্যাচারের আর নিজের ছেলের বেয়াদপির গল্প করে। কত তাড়াতাড়ি বুড়িয়ে যাচ্ছি জানিয়ে দেয় তাও। আরও ঘনঘন যে আমার ওর কাছে যাওয়া উচিৎ, সে কথাও বলে প্রতিবারই। পাক ধরা চুলে রং করে দিতে চায়...

রিক্লাইনিং চেয়ারে আধশোয়া হয়ে শুনে নি ওর বকুনি আর উপদেশ। প্রশংসা করলে খুশি হই, না করলে মারাত্মক ইনসিকিউইরিটিতে ভুগতে থাকি বিগতযৌবনা হয়ে ওঠার অজানা ভয়ে। ও ভিজে তোয়ালে দিয়ে মুখ মুছে দেবার পর উদ্বিগ্ন মুখে জেনে নি কী কী মাখতে হবে রোজ চানের আর শোবার আগে। জেনে নিই কোন অলৌকিক উপায়ে ফিরে যাওয়া যায় কুড়ির কোঠায়। 

তিন চার মাস পর পরই আমার ভারি মনকেমন করে ওর জন্যে। ওর নরম আঙুলের যত্নের জন্যে। ওর মিঠে গলার "দ্যাখো দিদি কত ফ্রেশ লাগছে এবার মুখটা" শোনার জন্য। ও আমার নাম না জানা সই। আমার কুইন্স বিউটি পার্লারের সাধারণ কর্মচারী।