Sunday, January 18, 2015

কুইন্স বিউটি পার্লার

ওর নরম আঙুলগুলো আমার গাল, কপাল, চোখের পাতা, গলা, ঘাড়, কানের লতিতে ঘুরে ঘুরে, উঠে নেমে, আরাম বুলিয়ে দিতে থাকে কখনো জোরে কখনো ধীরে...ঠোঁটের চারপাশ ছুঁয়ে, চিবুক হয়ে পৌঁছে যায় ভুরুর দুই পাশে, রগ চেপে ধরে কপালের আবছা বলিরেখা মুছে দেয় অনায়াসে। মিলিয়ে দেয় ক্লান্তির কালচে ছোপ, পরাজয়ের কালিমা, অবসাদের দাগা। আরামের আতিশয্যে আর ওর আঙুলের জাদুতে একটু একটু করে গলে যাই। আমরা কেউ কারুর নাম জানিনা। জানার দরকার পড়েনি কোনওদিন। শুধু রূপচর্চা করার ইচ্ছে হলে ওদের ছোট্ট পার্লারের দরজা ঠেলে ঢুকে পড়ি আর ওর চ্যাপটা নেপালি মুখের হাসি আমাকে ডেকে নিয়ে গিয়ে বসিয়ে দেয় গাবদা চেয়ারে। ড্রয়ার খুলে বের করে ফেলে নানারকম কৌটো, শিশি, তুলো।  কেরানী গৃহিণী চামড়ায় বুলিয়ে দেয় ওর ম্যাজিক ওয়ান্ড। অমুক তমুকের শাশুড়ির অত্যাচারের আর নিজের ছেলের বেয়াদপির গল্প করে। কত তাড়াতাড়ি বুড়িয়ে যাচ্ছি জানিয়ে দেয় তাও। আরও ঘনঘন যে আমার ওর কাছে যাওয়া উচিৎ, সে কথাও বলে প্রতিবারই। পাক ধরা চুলে রং করে দিতে চায়...

রিক্লাইনিং চেয়ারে আধশোয়া হয়ে শুনে নি ওর বকুনি আর উপদেশ। প্রশংসা করলে খুশি হই, না করলে মারাত্মক ইনসিকিউইরিটিতে ভুগতে থাকি বিগতযৌবনা হয়ে ওঠার অজানা ভয়ে। ও ভিজে তোয়ালে দিয়ে মুখ মুছে দেবার পর উদ্বিগ্ন মুখে জেনে নি কী কী মাখতে হবে রোজ চানের আর শোবার আগে। জেনে নিই কোন অলৌকিক উপায়ে ফিরে যাওয়া যায় কুড়ির কোঠায়। 

তিন চার মাস পর পরই আমার ভারি মনকেমন করে ওর জন্যে। ওর নরম আঙুলের যত্নের জন্যে। ওর মিঠে গলার "দ্যাখো দিদি কত ফ্রেশ লাগছে এবার মুখটা" শোনার জন্য। ও আমার নাম না জানা সই। আমার কুইন্স বিউটি পার্লারের সাধারণ কর্মচারী।

No comments:

Post a Comment