Thursday, November 26, 2015

স্ত্রী-বুদ্ধি ভয়ঙ্করী

রবীন্দ্রনাথ, লেনিন, বাবা-মা আর নারীর যৌনাঙ্গ নেই। মানে আছে, কিন্তু থাকতে নেই। মানে থাকতে আছে, কিন্তু তা নিয়ে প্রকাশ্যে আলোচনা করা চলে না। এঁদের যৌনজীবন, পছন্দ অপছন্দ, অভ্যেস, চয়েস কোনকিছু নিয়েই না। এর মধ্য়ে আবার মহিলাদের ব্যপারটা আরেক ধাপ এগিয়ে। কোনভাবে যদি এমন খবর পাওয়া যায় যে অমুক মহিলা তমুক লোকটার সঙ্গে থাকবে বলে নিজের বর-কে ছেড়ে চলে এসেছে, সংস্কারী জনতা তার শাপশাপান্ত বাপবাপান্ত করে সোশ্যাল মিডিয়া নামক চন্ডিমন্ডপে একে অপরের গা টিপে, চোখ মেরে রসালো জোক ছড়িয়ে দিয়ে বলবে - উফফ কী জিনিস! ওর খিদে মেটানো কি আর অমুকের কম্ম রে?

তার ওপর যদি দেখা যায় সেই মহিলা দু পয়সা কামিয়েছে এবং তালেবর হনুদের কম্যান্ড করে বেড়াচ্ছে জ্বলুনি আরও বেড়ে যায়। পাড়ায় পাড়ায় শোনা যেতে থাকে - আরে এইসব মহিলাদের চিনতে কারুর বাকি নেই। নিজেদের প্রয়োজন মেটাতে যার তার বিছানা গরম করতে এদের বিবেকে বাধে না।

বিবেক মানুষটা আবার খুব ফ্লেক্সিবল। কখনো বাবল গামের মতোন ফুলে ওঠে আবার কখনো লাথ খাওয়া কেন্নোর মতো কুঁকড়ে গর্তে সেঁধোয়। সুনন্দা পুষ্কর রহস্যজনকভাবে মারা যাবার পর বিবেক বোধকরি জুড়িগাড়ি চেপে হাওয়া খেতে বেরোয়। যে বিবেক 'দেখেছ কান্ড! নষ্ট মেয়েছেলেটা শশি থারুরের মতো সুপাত্রকে পাকড়েছে? নাহয় কটা বিয়েই করেছে। তাতে কী? হীরের আংটি আবার বেঁকা! তাছাড়া পুরুষমানুষের অমন একটু আধটু দোষ থাকেই। আহা কী সুন্দর ইংরিজি বলে, কেমন ফর্সা রং...আহা! ওই মেয়ছেলের আছে টা কী?' বলে হাঁক পেড়েছিল, সে বিস্ময়ে বাক্যহারা হয়।

ইন্দ্রাণী মুখুজ্জ্যের বিছানার রোল কল করতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে দেশভক্ত জনতা ভুলে যায়, সংবিধান বলেছে, বিচারাধীন ব্যক্তি দোষী সাব্যস্ত না হওয়া পর্যন্ত নির্দোষ -  innocent until proven guilty। আসলে অপরাধ নিয়ে তো তাদের মাথাব্যথা নেই। অপরাধী শনাক্ত হওয়া কিম্বা শাস্তি পাওয়ার ব্যপারটাও গৌণ। প্রাণভরে স্লাট শেমিং করা গেলে আর কী চাই? তাই, ইন্দ্রাণীর স্বামী গ্রেফতার হবার পর তারা বলেই ফেলে 'বাবা কী মেয়ে দেখেছ! সকলকে নাচিয়ে ছেড়েছে।'

এ কথা মানুষমাত্রেই জানে, যে স্ত্রী-বুদ্ধি ভয়ঙ্করী। স্ত্রী'র কথা শুনে চলে যে পুরুষ তাকে বলা হয় স্ত্রৈণ। স্বামীর কথা শুনে চলা/অনুগত স্ত্রী-এর জন্য অবশ্য এমন কোনও শব্দ অভিধানে নেই। কারণ স্পষ্ট। স্ত্রী স্বামীর কথা শুনবে এতে আবার অস্বাভাবিক কী আছে? এমনটাই তো হওয়ার কথা! তাও যদি চুপিচুপি ঘরের দোর দিয়ে বৌ-এর কথা শোনো মেনে নেওয়া যায়। প্রকাশ্যে স্ত্রী-এর উল্লেখমাত্র করলেও বাজারে জল্পনা শুরু হয়ে যায়, রাতে ওদের পছন্দের পজিশন নির্ঘাত ওম্যান অন টপ।

আমির খান মহাশয়ের বক্তব্যের পরেও আরেকবার তাই হলো। কিরণ রাও দেশে 'সেফ' বোধ না করলে যে দেশের অনেকানেক বীরপুঙ্গব তাঁকে সেই 'সেফটি' দিতে ইচ্ছুক এমন শোনা যায়। আমিরের চেয়ে কম বয়সী সঙ্গি বেছে নিতে পারলে নাকি তাঁর এমনটা মনে হতো না, কারণ এ কথা আমরা সকলেই জানি যে স্বামীর কাজই হলো স্ত্রী'র রক্ষাকর্তা হওয়া। যেখানে সানি লিওনির মতো গরম গণ-ভোগ্যা মহিলা এদেশে 'সেফ' কিরণ রাও-এর মতো 'সাধারণ' চেহারার মহিলা এদেশে কেন নিশ্চিন্ত বোধ করছেন না সেই নিয়েও প্রশ্ন শুনি। কিরণের ছোট চুল, ছোট বুক যে এদেশে কোনও পুং বিশ্বামিত্রকে টলাতে পারবে না, বুঝতে পারি।

শুধু মাঝেসাঝে, খুউউউউব মাঝেসাঝে (যেমন গত মাসে হলো দিল্লীতে) কিছু পুরুষের হাতে দুই-পাঁচ বছরের বাচ্চা মেয়ের ধর্ষণের খবর পড়ার সুযোগ পাই। ওদের একঢাল চুল, বিভঙ্গের ঢেউ, সুডৌল বুক, এসব ছিল?