Thursday, June 9, 2016

জামাইবাবু জিন্দাবাদ

আগামীকাল জামাই ষষ্ঠী। বাঙালি হিন্দুর বার্ষিক জামাইবাবাজির মহিমা কেত্তন উদযাপন। মাছ এবং আমের দাম বাড়বে। মিষ্টির দোকানে ভাইফোঁটার চেয়ে সামান্য ছোট লাইন পড়বে আর সকাল থেকেই ট্রেনে মাঞ্জা মেরে দম্পতিরা এন্ডাবাচ্চা সহ গৃহিণীর পিত্রালয়ে যাত্রা করবেন। জামাইষষ্ঠী পিতৃতান্ত্রিক অনুষ্ঠান না নয়, আজকের লেখার বিষয় সেটা নয়। অতীতের সমবয়সী শাশুড়ি-জামাই-এর মধ্যেকার রসালো প্রণয়কাহিনীও নয়। বিষয় হলো গিয়ে সিনেমা। মায়ের কাছে শুনেছি, তাদের অগুনতি জামাইবাবুরা জামাইষষ্ঠী উপলক্ষ্যে শ্বশুরবাড়ি এসে কব্জি ডুবিয়ে পেটপুজো করা ছাড়াও আরেকটা কাজ প্রায় রুটিন মেনেই করতেন - শালিবাহিনী নিয়ে সিনেমা দেখতে যাওয়া। দুপুরের খাওয়াদাওয়া মিটিয়ে, শালিরা যে যার মতো অর্গানজা, পিওর সিল্ক, আফগান স্নো, তুহিনা লোশনে সেজেগুজে রিক্সা ডেকে মানসী, নির্মলা, যমুনা এইসব নামের হলে, ব্যালকনির টিকিট কেটে চিনেবাদামের ঠোঙা হাতে ঢুকে পড়ত। ঘন্টা দুয়েক ঠেলাঠেলি করে হেসে, নায়কের দুঃখে রুমাল ভিজিয়ে, কাজল ধেবড়ে বেরিয়ে কোনো কেবিনে চপ কাটলেট কিম্বা মোগলাই পরোটা কষা মাংস ভাগাভাগি করে খেয়ে ঢেকুর তুলতে তুলতে সন্ধ্যে কাবার করে বাড়ি।

সারা বছর বাড়ির মেয়ে বৌদের সিনেমা দেখতে হলে সাধারণত বাবা কাকা শ্বশুর শাশুড়িদের লুকিয়ে করতে হতো। বড় মাইমার ছোটকাকু চাকরিক্ষেত্র থেকে বাড়ি ফিরে বৌদিদের সিনেমার টিকিট কেটে দিয়েছিল। দুপুরের দৈনিক দু ঘন্টার গেরস্থালীর ছুটির সময়ে তারা দল বেঁধে লুকিয়ে সিনেমা দেখতে যেতে পারলেও, ফেরার সময় শাশুড়ি ঠাকরুণের হাতে ধরা পড়ে যায়। ছোটকাকার কপালে মায়ের হাতের সপাট থাপ্পড় জুটেছিল। আর জাঁদরেল শাশুড়ি ঠাকরুণ মহাশয়া কোচওয়ান ডেকে বাগানবাড়িতে গিয়ে উঠেছিলেন। পরে সব ছেলেরা মিলে গিয়ে পায়ে পড়ে বৌদের শাসন করার অঙ্গিকার করলে তিনি আবার ফেরেন। পাঠকগণ এটুকু ডাইগ্রেশন নিজগুণে মাফ করবেন আশা করে গল্পটা বলার লোভ সামলাতে পারলাম না।

তো যাই হোক, সিনেমা দেখা বিশেষ করে বাড়ির মেয়ে বৌদের সিনেমা দেখা বরাবরই গর্হিত কাজ। শুধু বছরের এই একটা দিনে (জামাই ষষ্ঠী) কারুর মুখে সিনেমা দেখার কথা শুনে অসন্তোষের সামান্য ছাপটুকুও দেখা যেত না। জামাইবাবু-শালীর সম্পর্কের দুষ্টুমি খুনসুটির মধ্যেকার বন্ধুত্বের, যৌনতার মিশেলে, গায়ে গায়ে বসে নায়ক নায়িকার প্রেম দেখার অভিজ্ঞতার মধ্যে এক ধরণের মাদকতা ছিলই, যা হয়তো আজ এই ২০১৬ সালে বসে খুব মাথা খাটিয়েও শব্দের বাঁধুনিতে ধরতে পারব না।

আমরা একবারই জামাইবাবুর সঙ্গে সিনেমা দেখতে গিয়েছি। ওদের বিয়ের পর প্রথম জামাইষষ্ঠীতে। কল্যাণী সিনেমা হলে শাহরুখ খানের দেবদাস। হলের জঘন্য সাউন্ড সিস্টেমের কল্যাণে ৭০% ডায়ালগ বুঝতে না পারলেও, শাহরুখের দুঃখে দিদির চোখের জলে নাকের জলে হয়ে ফ্যাঁচ ফ্যাঁচ ফোঁত ফোঁত-এর আবহে আর ভনসালির শাড়ি গয়নার চোখ ধাঁধানিতে মিলিয়ে মিশিয়ে মনে মনে জামাইবাবু জিন্দাবাদ স্লোগান দিয়েছিলাম বৈকি!