Tuesday, November 25, 2014

রেড ক্রস



ডঃ সুকুমার শীল মনে মনে ঠিকই করে রেখেছেন আজ সবাইকে এক হাত নেবেন। সেই সমস্ত সহকর্মী যারা তাঁকে আড়ালে এবং আজকাল প্রকাশ্যেও ডঃ সু-শীল বলে ডাকেন আর কথায় কথায় তাঁর ছেলের ব্যপারে খোঁটা দেয়, আজকের ম্যানেজমেন্ট মিটিঙে তিনি তাদের দেখে নেবেন। ডঃ শীলের ঠাকুর্দার সময় থেকে পরিবারের প্রায় সকলেই ডাক্তারিকেই পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছে। শহরে তাঁদের পরিবারের নামডাক প্রচুর। তাঁর দুই ভাই, এক বোন, জামাইবাবু, ডাক্তার। ভাইপো ভাইঝিরাও ডাক্তারি পড়ার জন্য তৈরি হচ্ছে। এর মধ্যে বাগড়া দিয়ে বসলো তাঁর সুপুত্র। সে হারামজাদা জয়েন্ট এন্ট্রান্সটা পাশ করতেই পারলো না। অগত্যা কি আর করা। ডঃ সু-শীল গিয়ে মন্ত্রীমশাইয়ের পায়ে ধরে পড়লেন। মন্ত্রীমশাই তাঁর বহু বছরের পেশেন্ট। বাড়িতেও আসেন অনুষ্ঠান, পুজো পার্বণে। মন্ত্রীমশাইয়ের কল্যাণে ছেলেটা একটা মেডিকেল কলেজে ঢুকে বংশের মুখ রক্ষে করতে পেরেছে কোনোমতে। সেই ঘটনা কিকরে কে জানে হাসপাতালের ডাক্তারগুলো জানতে পেরেছে আর তার পর থেকেই তাঁর নাম দিয়েছে ডঃ সু-শীল।

এইসব সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতেই মিটিঙের সময় হয়ে এলো। হাসপাতালের আয় নাকি কমে গেছে। মুহুর্মুহু গজিয়ে ওঠা হালফ্যাশনের ঝাঁ চকচকে নতুন নতুন হাসপাতাল নাকি বিজ্ঞাপন, প্যাকেজের জোরে রুগি টেনে নিচ্ছে। এই লেক ভিউ হাসপাতাল বেসরকারি হলেও বহুদিনের পুরনো। নামডাকও ভালোই। তাই হৃত গৌরব ফেরানোর চেষ্টায় কোমর বেঁধে নেমে পড়েছে ম্যানেজমেন্ট। সিনিয়র ডাক্তারদেরও বলা হচ্ছে বেশি করে রুগি হাসপাতালে নিয়ে আসতে আর যতটা পারা যায় বেশি বিলিং করাতে। এক প্রকার টার্গেট দেওয়াই হয়েছে বলা যায়। আরও বলা হয়েছে নতুন স্ট্র্যাটেজি নিয়ে ভাবতে যাতে করে হাসপাতালের শ্রীবৃদ্ধি ঘটে।

 ২

মিটিঙের শুরুতেই জেনারেল ম্যানেজার চৌধুরি সবাইকে এক হাত নিলেন। ডঃ সাঁতরা কে ওষুধ কোম্পানির টাকায় সিরিয়ালের নায়িকার সাথে ব্যাংকক যাওয়া নিয়ে খোঁটা দিতেও ছাড়লেন না। তারপর সকলের কাছে নতুন স্ট্র্যাটেজি সম্পর্কে আইডিয়া চাইলেন। ডঃ শীল যেহেতু সিনিওরিটিতে সবার আগে তাঁর কাছেই সবার আগে জানতে চাওয়া হল। তিনি মোটামুটী রেডি ছিলেন, প্রায় এক নিঃশ্বাসে বলে গেলেন।

মিঃ চৌধুরি, আমার মনে হয় বাঁধা গতের বাইরে ভাবার দরকার এখন। রোগের হার যেহেতু হঠাৎ করে বাড়িয়ে দেওয়া সম্ভব নয়, নিত্যনতুন রুগি সেই অর্থে খুঁজে পাওয়াও কঠিন। ওদিকটা যেমন চলছে চলতে থাকুক। আমি ভাবছিলাম অন্য কথা। দিনকাল যা পড়েছে, মাঝে মধ্যেই নেতা মন্ত্রীরা অসুস্থ হয়ে পড়ছেন এবং সেই অবস্থায় একটা asylum খুঁজছেন। একটা safe house আর কি। আসুন, আমরা বরং সেক্রেটারিয়ট লেভেলে এটা মার্কেট করতে থাকি আর সি এম-এর সাথে একটা অ্যাপয়ন্টমেন্ট নিয়ে ওনাকেও ব্যপারটা জানিয়ে রাখি। তাহলে দেখবেন অচিরেই আমরা unofficially সরকারী safe haven এ পরিণত হয়েছি। ব্যবসা বা প্রচার কিছু নিয়েই আর ম্যানেজমেন্টকে মাথা ঘামাতে হবে না। আর প্রেসকে কোনো খবরাখবর পাচার করা হলেই স্টাফের চাকরি যাবে, internally এই মেসেজটা ছড়িয়ে দিতে হবে। ব্যস।



এই মিটিঙের পর থেকে লেক ভিউ হাসপাতালের রমরমা। ডঃ শীল প্রকৃত অর্থেই সুশীল হয়েছেন। কানাঘুষোয় শোনা যাচ্ছে, আগামী নির্বাচনে হয়তো একটা টিকিট পেলেও পেতে পারেন। তারঁ ছেলে এখানকার পড়াশুনো শেষ করে বিদেশে পাড়ি দিয়েছে। ফিরে এসে নিজের হাসপাতাল খুলবে বায়না করেছে। ডঃ সুশীল তাই জমির বায়নায় নেমেছেন। দাতব্য চিকিৎসালয় খুলবে বলে সরকারের কাছে কুড়ি তিরিশ একরের মতো একটা ছোটখাটো প্লট চেয়েছেন। অসুস্থ নেতারা সবরকমভাবেই তাঁকে সাহায্য করার চেষ্টা করছেন।