Monday, March 28, 2016

নারী মাত্রেই অপ্সরা আর পুরুষ মাত্রেই ধ্যানমগ্ন ঋষি

বাচ্চালোগ, একটা কথা বুঝুন। আমরা এমন একটা পৃথিবীতে বাস করি, যেখানে চুইং গাম, কন্ডোম, সর্ষের তেল, ল্যাপটপ, গাড়ি, বাচ্চাদের সাবান, বাড়ির রঙ, সবকিছু বেচতেই একটা নারীশরীর লাগে। পুরুষের ডিওস্প্রে বেচতেও আকাশ থেকে খসে পড়তে হয় কয়েক পিস সুন্দরী, পাখনাধারী পরী হুরীকে। পুরুষের সমস্যা হলো, তার হাতে ক্ষমতা, প্যান্টের zip এর ভেতরে শিশ্ন, মুখে মা মাসি থাকলেও, দেহে খাঁজ ভাঁজ নেই। এদিকে আবার বাকি জিনিসের মতোই, খবরের কাগজ আর ওয়েবসাইটও বাজারে বিক্রি করতে হয়। সেই বাজারেই, যে বাজারে মেয়েছেলের চেয়ে দামী পণ্য আর নেই।

এবারে ধরা যাক, খেলার পাতার ম্যাড়ম্যাড়েত্ব কাটিয়ে, তাকে প্রাণোচ্ছল করার তাগিদ থেকে, পুরুষ খেলোয়াড়দের ছবি ছাপলেই তো শুধু চলে না, তাদের সুন্দরী WAG দের ছবিও ছাপতে হয়। WAG জানেন না? Wives and girlfriends। বিদেশে, প্রতিটা বড় টুর্নামেন্ট-এর কভারেজের অবিচ্ছেদ্য অংশ এই WAG রা। ফুটবল থেকে টেনিস, কোনও খেলাই এই প্রথার বাইরে নয়। ম্যাচ চলাকালীনও ক্যামেরা ঘুরে ঘুরে রেগুলার ইন্টারভ্যালে একবার করে এঁদের শ্রীমুখ ও শ্রীতনু আমাদের দর্শন করাবেই। তবে ওয়াগ যদি হয় শাহিদ আফ্রিদির গিন্নীর মতো সর্বাঙ্গ বোরখায় ঢাকা কোনো মহিলা, তাহলে অবশ্য ব্যপারটা স্লাইটলি অন্যরকম হবে।

এবারে ভাবুন তো, ভালো করে ভেবে বলুন, মেরি কম, মালেশ্বরী কারনাম, সাইনা নেহওয়াল, জোয়ালা গাট্টা - এদের বর/প্রেমিকের নাম আপনি জানেন? মানে এক লহমায় গুগল না করেই বলে দিতে পারবেন? পারবেন না তো! কোনও মহিলা খেলোয়াড়ের বরের নাম বলতে পারবেন? হ্যাঁ সানিয়া মির্জার বরের নাম মনে পড়েছে। তাও কিনা সে শত্রুপ্রদেশ পাকিস্তানের ক্রিকেট প্লেয়ার বলেই। এবারে মনে করে দেখুন তো সানিয়া মির্জার খেলার খবরে কবার শোয়েবের ছবি দেখেছেন? মনে পড়ছে না তাই তো? বিশেষ দেখেননি। মানে দেখার কথাও নয়। শোয়েবের আর যাই থাক, ক্লিভেজ নেই। তাছাড়াও, সানিয়ার হারের জন্য শোয়েব হারামজাদাই দায়ী, এ কথা বলতে পুং সমাজের বুকে বাজবে। বাড়ির বৌকে মাঠে ছোট স্কার্ট পরে খেলতে পাঠিয়েছে এই কি কম কথা?

যাকগে, এইবারে আসা যাক অনুষ্কার কথায়। অনুষ্কা এমনিতেই সিনেমার নায়িকা। আর এ কথ আমরা সকলেই জানি, যে সিনেমার নায়িকা = 'বাজারের মেয়েছেলে'। ওরা ক্যামেরার সামনে ছোট জামা পরে নাচে, পরপুরুষকে জীবিকার স্বার্থে চুমু খায়, সফল ক্রিকেটার, বড়লোক ব্যবসায়ী দেখলেই তক্কে তক্কে থাকে, ছলে বলে কৌশলে তাকে বশ করবে বলে। এ হেন অনুষ্কা শর্মার বাপের ভাগ্যি ভাল যে তাকে বিরাট কোহলির মতো সুপুরুষ ক্রিকেটার পাত্তা দিয়েছে। আর শুধু পাত্তা দিয়েই ক্ষান্ত থাকেনি, তাকে মাঠে/ট্যুরে সঙ্গে নিয়েও গেছে। এখন অবশ্য প্রেমটা ভেঙে গেছে। কিন্তু তাতে কী? শুকনো মুখে ক্রিকেটের সমালোচনা করতে আর কাঁহাতক ভালো লাগে বলুন? তার চেয়ে একটু মশলা ছড়িয়ে নেওয়া যাক। বিরাট খারাপ খেললে, অনুষ্কা বিষকন্যা। ভালো খেললে, তাকে দুয়ো দিয়ে বলা যায় 'দেখলি তো! পুরুষ সিংহ এমনই হয়। প্রেম ট্রেমের মতো ঠুনকো ব্যপার নিজের কাজকে প্রভাবিত করতে দেয় না। দ্যাখ কেমন সুপাত্র খোয়ালি।' শোনা যায়, অনুষ্কা শর্মা ছবি প্রতি পাঁচ-ছ কোটি টাকা রোজগার করেন বলিউডি নারী-পুরুষ রোজগারের বৈষম্যের বাজারেও। তবে তাতে কী? এই ধরাধামে নারী মাত্রেই অপ্সরা, আর পুরুষ মাত্রেই ধ্যানমগ্ন ঋষি, কলিযুগে যাঁরা বিরাট কোহলি অবতারে জন্মগ্রহণ করেন।

3 comments:

  1. পুউরো ফাটিয়ে ...

    ReplyDelete
  2. মাইথোলজি থেকে স্পাই থ্রিলার-সর্বত্রই গল্প মানেই হানি ট্রাপ। সে দৈত্য দানব যেই হোক না কেন। হানি ট্রাপ না থাকলে পুরুষের সাফল্য এত অবধারিত-ইজি-যে দৈত্য দানো মানুষেরা সহজেই স্বর্গকে জিতে নেবে। সৃষ্টি রসাতলে যাবে। এতেব ভগবানের সৃষ্টি অপ্সরা। নইলে পুরুষমাত্ররই এত বীর্জের ত্যেজ, মাঠে নামলেই সেঞ্চুরী, নইলে দশ উইকেট অবধারিত। সেটাকে একটু মেলোডাউন করা দরকার। তাছারা স্পোর্টসে খেলোয়াররাই পি আর কোম্পানী লাগায়। খেলোয়ারদের অতিমানবিক সুপারম্যান ইমেজ ক্রিয়েট করতে। সুতরাং ব্যার্থতার জন্য -স্কেপগোট লাগে। সেক্ষেত্রে গার্লফ্রেন্ডের থেকে কনভিন্সিং আর কে হতে পারে?

    ReplyDelete