Monday, March 14, 2016

নারদ নারদ!

ঘটনাবলি 

নারদ নিউজ সংস্থার শুট করা একটা ভিডিও আজ প্রকাশ পেয়েছে। ২০১৪ সাল থেকে তারা ভিডিও শুট করা শুরু করে। ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে লুকনো ক্যামেরার সামনে তৃণমূলের বিভিন্ন নেতামন্ত্রি টাকা নিচ্ছেন। যে ভিডিওটা ইউটিউবে দেখা যাচ্ছে, তার শুটিং-এর সময়কাল ২০১৪। লোকসভা ভোটের ঠিক আগে। যেকোনো ভোটের আগেই যে ভারতের বাজারে আক্ষরিক অর্থেই টাকা উড়ে বেড়ায়, এ কথা আমরা মোটামুটি জানি। সমস্ত রাজনৈতিক দলই যে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে কর্পোরেট দুনিয়ার কাছ থেকে মোটা টাকা 'চাঁদা' পায় তাও অজানা নয়। বাস্তবিক, একটা র‍্যালি করতে শুধু যে পরিমাণ পেট্রল খরচ হয়, তার অংকই কয়েক লাখ। এ ছাড়া স্টেজ, মাইক, খোরাকি, হেলিকপ্টার ইত্যাদি তো আছেই। বেচারা দলগুলোর কোনও দোষ নেই। একটা ঠিকঠাক প্রচার ক্যাম্পেন নামাতে যে কোনো দলই কয়েক শো কোটি টাকা খরচ করতে বাধ্য হয় (আমাদের নামোভাইই তো ২০১৪ সালে তা করে দেখিয়েছেন)। আর টাকা লাগলে গৌরী সেন-দের তলব করতেই হয়। ছোট গৌরি সেনেরা দশ বিশ লাখ দিলে, বড়রা দশ বিশ একশ কোটিতে আনাগোনা করেন। নারদের দেখানো ভিডিও তে তেমনই একটি (জাল) ছোট সংস্থার পক্ষ থেকে বিভিন্ন নেতাকে চার পাঁচ লাখ টাকা করে দেওয়া হচ্ছে। শুধু মুকুল রায়কে কুড়ি লাখ দেওয়া হয়, তবে সেটা ভিডিওতে ধরা পড়েনি। সাকুল্যে ৭৩ লাখ টাকা দেওয়ার ভিডিও দেখা যাচ্ছে। কোম্পানি অবশ্য দাবী করেছে ওদের কাছ ৫২ ঘন্টার ফুটেজ আছে। সেখানে আরও নতুন কোনও লেনদেন-এর সন্ধান মিললেও মিলতে পারে।

প্রশ্নগুলো 

  • ২০১৪ সালে তোলা ভিডিও.২০১৬ বিধানসভা ভোটের আগে ব্যবহার করার কারণ কী? তখন কেন এগুলো প্রকাশ করা হয়নি? সংস্থা কীসের অপেক্ষায় ছিল?
  • নারদ নিউজ-এর ওয়েবসাইটে যে যোগাযোগের ঠিকানা দেওয়া আছে, তা দুবাই-এর। এটা খুবই সন্দেহজনক। মূলত ভারতের খবর সম্প্রচার করা কোনো নিউজ পোর্টাল কেন দুবাই থেকে চালিত হবে অনেক ভেবেও এর কোনও সদুত্তর পেলাম না।
  • নারদের পক্ষ থেকে যে টাকাটা ভিডিও তোলার স্বার্থে খরচ করা হয়েছে, সেই টাকা কোথা থেকে এল? সেই টাকার রঙ সাদা না কালো? এদের প্যাট্রন কে?
  • এমন একটা ভিডিও হাতে থাকা সত্ত্বেও কোনও আইনি পদক্ষেপ না নিয়ে স্রেফ হুজুগ তৈরি করার চেষ্টা করার কারণ কী? সংস্থা অ্যান্টি-কোরাপশন এক্টিভিজম করতে চাইলে প্রিভেনশন অফ কোরাপশন অ্যাক্ট-এ এদের বিরুদ্ধে মামলা করতে পারত। কিন্তু করেনি।
  • ভিডিওটা জনস্বার্থে করা, নাকি এই সংস্থাও কোনও বিশেষ সুবিধে পাওয়ার লক্ষ্য নিয়েই এটা করেছে?
মাছের গন্ধ

২০১৪ সালে তৃণমূলের সঙ্গে হাড্ডাহাড্ডি লড়বে বলে যে দল প্ল্যান করেছিল, তার নাম বিজেপি। নিন্দুকে বলছে, এই ভিডিও তৈরির পেছনে বিজেপি-এর টাকা রয়েছে। অবশ্যই সেটা প্রমাণসাপেক্ষ। এখন যদি তর্কের খাতিরে ধরে নিই, এটা বিজেপিরই কারসাজি, তাহলে আরেকটা প্রশ্ন মাথায় চলেই আসে। ২০১৬ বিধানসভা ভোটে তৃণমূল লুকিয়ে চুরিয়ে বিজেপি-এর হাত ধরেছে এমন খবরে/গুজবে বাজার সরগরম। তৃণমূল সমর্থকদের মধ্যেও এই ধরণের ইঙ্গিত শোনা গেছে। লকেট টলিউডের সদস্য হওয়ার দরুন দিদি তাকে জিতিয়ে দিতে পারে, এমন কথাও শোনা গেছে। অবশ্য ভোটের বাজারে গুজব এবং স্পেকুলেশন থাকবে এমনটাই স্বাভাবিক। কিন্তু যদি এই ভিডিও-এর পেছনে বিজেপি-এর ভূমিকা থাকে, তাহলে বিজেপি-এর সঙ্গে তৃণমূলের গোপন চুক্তির থিওরি বিশেষ কল্কে পাচ্ছে না।

কোনো পুরুষকে নেশা করিয়ে তার সঙ্গে কোনও মহিলার অন্তরঙ্গ মুহুর্তের ভিডিও করলে ভিডিও যারা তুলছে তাদের দিকে ষড়যন্ত্র করে ফাঁসানোর অভিযোগ যেমন তোলা যায়, পুরুষটিকেও জ্ঞানত এই ঘটনায় অংশগ্রহণ করার জন্য দায়ী করা যায়। তৃণমূলের পক্ষ থেকে যারা অ্যাপলজিস্ট সেজে 'এমন তো হয়েই থাকে', 'সব দলই টাকা নেয়', ইত্যাদি বলবেন বলে তৈরি হচ্ছেন, তাদের এটা মাথায় রাখা উচিৎ। মমতা ব্যানার্জি ব্যক্তিগতভাবে হয়তো সৎ। হয়তো সত্যিই ঘুষ নেন না। হয়তো ওনার চটির দাম ৩৫০০ টাকা এটা গুজব। হয়তো ওনার ঘড়িটা আসলেই আম আদমির মতো দু হাজারি। হয়তো বিলাসব্যসনেও মহিলার বিশেষ আগ্রহ নেই। এসব কিছু হওয়া সত্ত্বেও একদল বোকা ঘুষখোর মানুষের নেত্রী হবার দায় এবং লজ্জা দুইই তাঁকে নিজের কাঁধেই বইতে হবে। 

হাতে যা রইল 

তৃণমূলের একটা বড় সুবিধে হলো, দলটার কোনও আইডিওলজি কিম্বা এজেন্ডা নেই, সিপিএম বিরোধিতা ছাড়া। সেটুকু অবশ্য তারা বেশ ভালোভাবেই দাঁতনখ বের করেই করে থাকে। জনগণেরও তৃণমূলের কাছ থেকে (বস্তুত কোনও রাজনৈতিক দলের কাছ থেকেই) সততার প্রত্যাশা নেই, সে দিদি যতই 'সততার প্রতীক' শব্দবন্ধের ওপর জোর দিন না কেন। এর ফলে তৃণমূলের লাভের লাভ যেটা হবে, সাধারণ মানুষ, যারা উঠতে বসতে নাইতে খেতে বিভিন্ন দলের নেতা গুন্ডার চোখ রাঙানি খেয়ে এবং তাদের ভেট দিয়ে তুষ্ট করে বেঁচে থাকতে অভ্যস্ত হয়ে গেছে, এই ৭৩ লাখি গল্পে সম্ভবত বিশেষ আমল দেবে না। টাকার অংকটা আরেকটু বেশি হলে হয়তো পরিস্থিতি অন্যরকম হোত। বাংলার সুবিধাবাদী মিডিয়া কতদূর এবং কতদিন এই ভিডিও নিয়ে শোরগোল করবে, তাও নির্ভর করছে তৃণমূলের সঙ্গে তাদের 'আলোচনা'-এর ওপর। এছাড়াও, বিজেপি যদি দ্যাখে এই ভিডিও বাম-কং জোটকে বেশি মাইলেজ দিয়ে ফেলছে, তারাও নিজেদের কলকাঠি নাড়াচাড়া করা শুরু করে দিতে পারে। 

সারদার প্রভাব তো ভোটে পড়েনি, নারদের প্রভাব পড়বে কিনা দেখা যাক। আপাতত, এমন বসন্ত রাতে আলো জ্বালো বিছানাতে, থাকিও না সাতেপাঁচে, লুকায়ো ঠিকানা...

1 comment:

  1. Ar akta adbhut jinis o lakkhonio footaage e jato pariman taka ak akjon ke dite dakha jacche mane bundle of notes dekhe jeta apparently mone hocche tar sathe claimed amount gulo kintu milche na...mane ja ta akta dekhiye dilei holo....ar satyi 2014 theke atodin dhore ghatana ta lukiye rakha holo kano ar atogulo taka oi impex ki korte kotha theke jogar korlo...?

    ReplyDelete