Wednesday, March 18, 2015

মুখ এবং বুক

বহু বছর হল মুখ বিজ্ঞাপনে ঢেকে গেছে। এবার বুক ঢাকার পালা। উঁহু এ বুক সে বুক নয়। এ হল book। ফেসবুক নামের যে তরঙ্গে ভেসে আমরা নিরন্তর ছুঁয়ে চলেছি ভিনদেশের, ভিনবাড়ির, ভিনজগতের জীবন তাদের ভাগ করে নেওয়া ছবির, স্ট্যাটাসের, লেখার মাধ্যমে; চ্যাট বাক্সে যাদের বলছি রাতের মেনু, কলেজের কেচ্ছা অথবা আগ্রহভরে শুনছি বিয়ে ভাঙ্গার গল্প - একদিন হঠাৎ ঠিক করলাম, এসবের থেকে বিরতি নেওয়ার দরকার। আর ভদ্রমহিলার যেহেতু এক কথা, তাই কয়েকটা ক্লিক পরপর করে, অ্যাকাউন্টখানা deactivate করে দেওয়া গেল। মেইলের বাক্সে, এসএমএস-এ কয়েকটা প্রশ্ন ছুটে এল আমার কী হয়েছে জানতে। খুচরো বৈরাগ্য শুনে নিশ্চিন্ত হয়ে ফিরেও গেল।

আসলে সত্যি যদি তেমন বলার মত কিছু হতো, মানে বেশ মুখরোচক কিছু - যেমন ধরুন হঠাৎ রাস্তায় পেয়ে কেউ রেপ করল, অথবা অ্যাসিড ছুঁড়ে পুড়িয়ে দিল চাঁদমুখ, অথবা কুপিয়ে খুন করে গেল, অথবা লিম্ফোসারকোমা অফ দ্য ইন্টেস্টাইনের প্রকোপে বেঘোরে প্রাণ গেল, তাহলে কিন্তু আয়েশ করে বাড়িতে বসে মাউস টিপে টিপে deactivate করে উঠতে পারতাম না প্রোফাইলখানা। উল্টে আমার অবর্তমানে সেখানা আমার স্মৃতিসৌধ হয়ে জ্বলজ্বল করত আন্তর্জাল প্রান্তরে। রাশি রাশি ছবি, লেখা, লোকদেখানো আদিখ্যেতা পড়ে থাকত একা - লোকজন মাঝে মাঝে ঢুঁ মেরে যেত, কমেন্ট পড়ে পড়ে বুঝে নিতে চাইত প্রেম অপ্রেম বিষাদ আহ্লাদের হদিশ। হয়তো ভাবত আহা কেমন চ্যাট আলো করে থাকত গো, কোথা থেকে যে কী হয়ে গেল...চুক চুক! হয়তো ভাবত না। টাইমলাইনে এসে হয়তো লিখে যেত তুমি যেখানেই থাকো ভালো থেকো, তোমার দ্রুত আরোগ্য কামনা করি, সব ঝড় কেটে যায় একদিন...এও যাবে। হয়তো যেত না। হয়তো সুর্যোদয়ের, মেঘের, গোলাপের ছবিতে ছয়লাপ করে দিত, বা দিত না।

এদিকে কবি সেই কবেই অভিযোগ করে গেছেন - শরীর শরীর তোমার মন নাই? অথচ আমাদের দেখুন, শরীরের নাগাল পাই না, ছবিকেই শরীর বানাই, মনের নাগাল না পেয়ে স্মাইলি জমাই। মুখে বুকে আঙুল বোলাতেই চালাক ফোনের থেকে একরাশ রঙিন ধোঁয়া বেরিয়ে এসে গড়ে তোলে অবয়ব। বিজন ঘরে নিশীথ রাতে সকলেই ঢুকে পড়ি শূন্য হাতে।


No comments:

Post a Comment