Monday, March 2, 2015

কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়!


আমার নাম নির্ভয়া নয়। সৌভাগ্যবশত, আমাকে কেউ কোনদিন রেপ করেনি। যৌনাঙ্গে লোহার রড ঢুকিয়ে মেরে ফেলেনি। আমার অপরাধীদের শাস্তির দাবীতে ধর্নাও দেয়নি। শুধু একটু আধটু গায়ে হাত টাত দিয়েছে রাস্তাঘাটে। তবে সেসব তো জলভাত। কবি তো আগেই বলে দিয়েছেন, আপনা মাংসেই হরিণা বৈরি হবার কথা। বানভাসি কন্যার জীবনভোর সর্বনাশ হবার কথা। ঐসব বলে তাই খামোকা আপনাদের মূল্যবান সময় নষ্ট করব না। বরং 'সভ্য বদ্র পোষাক' পরে লেডিজ কম্পার্টমেন্টে চড়াই শ্রেয়। তাছাড়া আজকে নির্ভয়ার কথাই বলা দরকার। কারণ আর কিছুই নয়, নির্ভয়া কান্ডে শাস্তিপ্রাপ্ত জনৈক যুবক সদ্য তার অসহায়তার কথা এক সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছে। তার প্রতি আমার গভীর সমবেদনা জেগে উঠেছে। 

সত্যিই তো। কোনও ভদ্র মেয়ে কি রাত নটায় এক পুরুষ বন্ধু সাথে রাস্তায় ঘুরে বেড়ায়? নাকি ধর্ষিত হবে বুঝতে পেরে সেই কাজে বাধা দেয়? নাকি অভব্য পোষাক পরে বাড়ি থেকে বেরোয়? মেয়েরা যখন জানেই, তাদের শরীর পুরুষের ভোগবিলাসের উপাদান, সেইমতো চলাই তাদের উচিৎ। অযথা সাঁকো নাড়ালে যা হবার তাই হয়। দু পায়ের ফাঁকে হামলে পড়ে পৌরুষের বজ্রনির্ঘোষ। খোয়া যায় মান, সম্মান, প্রাণ। প্রাণ গেলে অবশ্য এক দিক থেকে ভালোই, কারণ তাহলে আর ভগ্ন সম্মানের বোঝা বয়ে বাকি জীবনটা বেড়াতে হয় না। উলটে শহীদের মর্যাদা জোটে কপালে। মোমবাতি মিছিলও। আর উপরি পাওনা হিসেবে কখনো আত্মীয়স্বজনের চাকরি, আর্থিক অনুদান (ক্ষতিপূরণও বলতে পারেন) ইত্যাদি। এক কথায়, সেলিব্রিটি স্ট্যাটাস যাকে বলে। আর এইসব সাত পাঁচ ভেবেই নির্ভয়ারা জিন্স টপ পরে, রাত করে বাড়ি ফেরে, পুরুষবন্ধুর সাথে খোলামেলাভাবে মেশে। শুধুমাত্র ধর্ষিত হবার আশায়। 

আর তাই আমরা, আমরা যারা রেপড হইনি বা করিনি বলে যথাক্রমে প্রিভিলেজড ও এনলাইটেন্ড, তারা নির্ভয়ার দোষীদের মৃত্যুদন্ডের বিরুদ্ধে সোচ্চার হই সোশ্যাল মিডিয়ায়। মৃত্যুদন্ডের মতো পৈশাচিক আইনের নিন্দা করতে। আর যে বেচারা লোকটা শুধুমাত্র এক মহিলার শরীর ভোগ করতে চেয়ে তার কাছে বাধা পেয়ে তাকে নির্যাতন করতে বাধ্য হয়, সে বিদেশী চ্যানেলকে বলে, "মহিলারাই ধর্ষনের জন্য বেশি দায়ী পুরুষদের চেয়ে।" 



নির্ভয়া আর অভিজিৎ রায়ের ভাগ্য একই গোত্রের। এই ভদ্রলোককেও সুখে থাকতে ভূতে কিলিয়েছিল কোনো এককালে। নইলে কি আর সে যেচে পড়ে ধর্মের সমালোচনা করতে গিয়ে মারা পড়ল? সে দায়ও কিন্তু তাকেই নিতে হবে। কারণ, যে বা যারা তাকে কুপিয়ে মারার পবিত্র কর্তব্য পালন করেছে তাদের আর্থ সামাজিক অবস্থা, মানসিক গঠন, তারা সংখ্যালঘু না গুরু, ইত্যাদির চুলচেরা বিচার করাই সর্বাগ্রে কাম্য। নিন্দা করা কিম্বা শাস্তির দাবী, গৌণ। আহা খুনি বলে কি মানুষ নয়! তাদের কি শখ আহ্লাদ স্পর্শকাতরতা থাকতে নেই?  মৌচাকে ঢিল ছুঁড়লে হুলের বিষ সহ্য করতে জানতেই হবে। 

বাড়ির বাইরে পা ফেলার আগে বা কলম ধরার আগে এ কথা মাথায় রাখতেই হবে, যে কোনো বিসদৃশ ঘটনার জন্য, কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়। 

3 comments: