Monday, June 29, 2015

আমেরিকার গর্ব আমার নয়

আমেরিকা পৃথিবীর সবচেয়ে প্রগতিশীল দেশ, এমন ধারণা উপমহাদেশের কেউ কেউ সানন্দে পোষণ করেন। অথচ আমেরিকা সেই দেশ যাদের সিভিল রাইটস মুভমেন্টের পরে ভোট দিয়ে কৃষ্ণাঙ্গ রাষ্ট্রপতি নির্বাচন করতে কেটে গেছে এতগুলো দশক। মহিলা রাষ্ট্রপতি তারা স্বাধীনতার এতগুলো বছর পরেও নির্বাচন করতে পারেনি। আমেরিকা এমন একটা দেশ যেখানে মৃত্যুদণ্ড স্বমহিমায় বহাল। আমেরিকা সেই দেশ যেখানে সংসদে (কংগ্রেস) মহিলা সদস্য ১৮% মাত্র। সর্বশেষে, আমেরিকা পৃথিবীর তেইশতম দেশ যেখানে সমকামী বিয়েকে আইনি স্বীকৃতি দেওয়া হলো। এর আগে আরো বাইশটা দেশ এই পদক্ষেপ নিয়েছে, আমেরিকাকে এই বিষয়ে পথিকৃত কোনমতেই বলা চলে না।

অথচ কী আশ্চর্য, ফেসবুকের রামধনু রঙের জোয়ার দেখলে মনে হচ্ছে আমেরিকা সমকামী বিয়ের স্বীকৃতি দেওয়ামাত্র পৃথিবীর সমস্ত সমকামী/এলজিবিটি মানুষের স্বাধিকারপ্রাপ্তি ঘটে গেছে। ফেসবুকের সেলিব্রেট প্রাইড অ্যাপটি আমাদের শেখাচ্ছে আমেরিকার গর্বে গর্ব করে কিভাবে প্রোফাইলের ছবিটা রামধনু রঙে ঢেকে ফেললেই প্রমাণ হবে আমি সমকামীদের সমব্যথি/সহমর্মী। কিভাবে আমেরিকার সমকামীদের সাথে একাত্মবোধ করতে না পারলে আমার আলোকপ্রাপ্তি অসম্পূর্ণ থাকবে। আমেরিকা যেন পৃথিবীর প্রতীক, আমেরিকার সাফল্যেই জগতের সাফল্য। গ্লোবাল সিটিজেন হয়ে উঠবার প্রথম ও সর্বপ্রয়োজনীয় ধাপ, আমেরিকার সাথে একাত্মবোধ করা।

রাষ্ট্রপতি ওবামাকে অসংখ্য ধন্যবাদ এমন সাহসী পদক্ষেপ নিতে পারার জন্য। মার্ক জুকারবার্গকে অভিনন্দন নিজের দেশের আইনব্যবস্থা/সরকারের গর্বে ছাতি ফুলিয়ে ফেসবুকময় রামধনু রং ছড়ানোর জন্য। তবে এ প্রশ্ন না করে থাকা যাচ্ছে না, যদি সসাগরা পৃথিবীর সমকামীদের অধিকারের ব্যপারে ফেসবুক এতটাই সচেতন, তাহলে আয়ারল্যান্ডের মতো দেশ (যেখানে এখনও ভ্রুণহত্যা নিষিদ্ধ) সমকামীদের সমানাধিকারের স্বীকৃতি দিলে কেন তা নিয়ে কাউকে উচ্চবাচ্য তো দূর, মাথা ঘামাতেও দেখা যায় না!

গোটা ব্যপারটা আর তাতে উপমহাদেশের অত্যুৎসাহ দেখে মনে হচ্ছে চিনের চেয়ারম্যান আমাদের চেয়ারম্যান বলার পর এবার বলা হবে আমেরিকার গর্ব আমাদের গর্ব।

No comments:

Post a Comment