Wednesday, June 3, 2015

সূর্য বলল ইশ


সূর্যবাবুর বয়স হয়েছে। নিজেই বেশ বুঝতে পারছেন, এ ব্রহ্মাণ্ডে আর বেশিদিন নেই। অচিরেই একদিন ভুস করে নিভে যেতে হবে। আর তাই নেভার আগে দপদপিয়ে জ্বলে উঠেছেন। পাড়াময় তাণ্ডব করে বেড়াচ্ছেন। এর পুকুর শুকিয়ে দিচ্ছেন, ওর মাথা টলিয়ে দিচ্ছেন, ঘামে ঘামাচিতে একসা করে ছেড়ে দিচ্ছেন পাহাড়  জঙ্গল সমতল। এমন দিন এসেছে যে পাহাড়ও হাসি ভুলে কাঁচুমাচু মুখে চেয়ে আছে নীচের সবুজ দাবদাহের দিকে।

এদিকে এদ্দিন যারা অজান্তে সুর্যবাবুকে সাহায্য করে এসেছেন ফ্রিজ এসি চালিয়ে ওজোন স্তর ফুটো করে, তারা পড়েছেন মহা ফাঁপরে। উঁচু বাড়ির উঁচু ট্যাঙ্কের জল কল দিয়ে বেরনোমাত্রই হাতে ফোস্কা পড়ে যাচ্ছে। ওই জলে আলু ডিম সেদ্ধ করা কিম্বা ঠাকুমার হাঁটুতে সেঁক দেওয়া গেলেও, চান করার রিস্ক নেওয়া যাচ্ছে না। এদিকে ফ্যান্সি ঝাঁ চকচকে বাথরুমে সবেধন নীলমণি বালতিখানা ঝি ঘর মোছার কাজে ব্যবহার করে।  বালতি ফালতির মতো আনফ্যাশনেবল ব্যপার স্যপার  গিন্নীমা মোটেই পছন্দ করেন না, কাজেই বালতিতে জল ভরে চারঘন্টা পরে চান করার সম্ভাবনাও নেই। অগত্যা প্রায় কাকভোরে আজানের সময়ে উঠে চান সেরে নটার মধ্যে শীত এবং আতপ নিয়ন্ত্রিত আপিসে ঢুকে পড়াই একমত্র উপায়। উইকেন্ডেও গেম প্ল্যানের বিশেষ পরিবর্তন হচ্ছে না। সক্কাল সক্কাল সপরিবারে একটা মলে ঢুকে পড়তে হবে। কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে ভূমিকম্প যেকোনো বিষয়ের সিনেমা দেখে ফেলতে হবে। তারপর পান ভোজন এবং শেষে মলত্যাগ।

 অনেকেই এর মধ্যে কর্পোরেট চক্রান্ত দেখতে পাচ্ছেন। সূর্যবাবু এসি, কালো চশমা, কুলার কোম্পানির টাকা খেয়েই এমন কার্যকলাপ করছেন এমন অভিযোগ বিভিন্ন স্তরের মানুষের মুখে শোনা যাচ্ছে। এদিকে মানুষের ক্ষোভ জমতে জমতে আকাশ ছুঁয়েছে। তবে আকাশ ছুঁলেও সূর্যের নাগাল পাওয়া যায়নি। অন্যদিকে ফেসবুক নামক বিপ্লবের প্ল্যাটফর্মে 'বদলা নয় বাদল চাই' আন্দোলন জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এই আন্দোলনের মূল উদ্দেশ্য একটা অনলাইন পিটিশন জমা দেওয়া। অংশগ্রহণ করতে গেলে সুর্যকে ব্যাকগ্রাউন্ডে রেখে ফোরগ্রাউন্ডে নিজের ঘর্মাক্ত কলেবরের সেলফি তুলে পোস্ট করতে হচ্ছে। গোড়ায় অনেকে নিয়মাবলী খুঁটিয়ে না পড়ার কারণে জিম, বেডরুম ইত্যাদি নানা জায়গায় পরিশ্রমের ফলে ঘেমে যাওয়ার পর সেই ছবি তুলে পোস্ট করার ফলে আন্দোলনের হোতাদের লজ্জায় পড়তে হয়। বেশ কিছু ছবি ফেসবুক কর্তৃপক্ষ ব্যানও করে। জনরোষ এমন জায়গায় পৌঁছেছে যে শহরের একটি ওয়ার্ডে রক্তদান শিবিরে 'ভারতবর্ষ সুর্যের এক নাম' গান চালানোয় স্থানীয় লোকজন চড়াও হয়ে মাইক ভেঙে দেয়।   

সূর্যবাবুর মোটা চামড়ায় অবশ্য হেলদোলের লেশমাত্র নেই। নিজের উঁচু হাতির দাঁতের মিনারে রিমোট হাতে বসে অন্যান্য সৌরজগতের কর্তাব্যক্তিদের চালচলনের সঙ্গে পায়ে পা মিলিয়ে চলতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ সূর্যদা জানেন, যতক্ষণ শ্বাস ততক্ষণ আশ। আর যতদিন তেজ, ঠিক ততদিনই ফুটেজ।

No comments:

Post a Comment